এক রহস্যময় ভালোবাসা


প্লিজ ওনাকে মারবেন না আর!! ছাড়ুন প্লিজ। মরে যাবে তো। কিছুখন খুব আকুতি করে বললো ইরা। কিন্তু অপর প্রান্তের মানুষ টা তার কোনো কথা না শুনে ছেলে টাকে মারতে মারতে রক্তাক্ত করে ফেলে দিয়েছে নিচে রাস্তায়। অপর প্রান্তের মানুষ টার ঠিক সামনে গিয়ে গাল বরাবার একটা থাপ্পড় মারে ইরা।আর সর জুরে কয়েক টা বকা দিয়ে দেয়। ইস্টুপিট কলেজ ক্যাম্পাসে মারামারি করতে এসেছেন। কে এলাউ করেছে আপনাকে! ইরার আশেপাশে মুহুর্তে এক দুই জন করে পুরো ৫০ জন পালোয়ানের মতোন দেখতে বডিগার্ড গিয়ে ধরেছে।শুধু যে এই বডিগার্ড রা ঘিরে আছে তা নয় পুরো কলেজ ক্যাম্পাসের সবাই তাকিয়ে দেখছে। ছেলেটা কে তারা সবাই চিনে কিন্তু মেয়ে টাকে তো কেউ চিনে না। কে এই মেয়ে আগে কখনো দেখেছে বলে মনে হয় না। এত সাহস কোথায় পেলো এই নারী সয়ং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর ছেলের গায়ে তুলেছে। আজ ও কি এই মেয়ে বেঁচে থাকবে।

ইরার সহ জুড়ে থাপ্পড় মারাই গালে পাচ আঙুলে ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। বডিগার্ড এর মধ্যে একটি লোক মেয়ে টিকে আটকাতে চাইলে তার গালে সর জুরে ইরা আরেক টি থাপ্পড় মারে। আর চেঁচিয়ে চেচিয়ে বলে হাউ ডেয়ার ইউ! ডোন্ট টাস মি.। তুমি চিনো আমাকে??

ইরার ঠিক কিছু খন পর কলেজ ক্যাম্পাজে প্রবেশ করে তার বেষ্ট ফেন্ড সাজিদ আর জুথী!! এত লোকের মাঝে থেকে ইরা কে টানতে টানতে নিয়ে যায়। আর সবাই কে ইরার ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে আসে ।
স্বয়ং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর ছেলে আদনান সিকদার আদিল তাকে থাপ্পড় মারার মজা বুঝাবে এই নারীকে।তার মধ্যে ক্ষমা করার মতোন এত মহৎ গুন টা নেই।আদিল এতখন চুপ ছিলো শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে এই নারী কে দেখ ছিলো। যেখানে তার নাম শুনলে সবাই কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে যায় সেখানে কিনা এই পিচ্চি একটা মেয়ে তাকে থাপ্পড় মারলো।
পাশে দাড়িয়ে থাকা বডিগার্ড দের মধ্যে এক জন বললো!স্যার আপনি শুধু এক বার বলুন এই নারীকে কি করতে হবে। আপনি চাইলে…
আদিল বডিগার্ড এর কথাই পাওা না দিয়ে গান গাইতে শুরু করলো!

!!! প্রেমে পরেছে মন! প্রমে পরেছে!!!
!!!অচেনা এক মানুষ আমায় পাগল করে ছে!!!
এই মেয়েকে খোঁজে বের করো।১ঘন্টার ভেতরে আমার সামনে উপস্থিত করো।রাইট নাও!!!আদিল নিজের কথা শেষ করে গাড়িতে গিয়ে বসলো।
ইরার কলেজে আজকে প্রথম দিন। সে ঠিক ভাবে কাউকে চেনে না।ইরা,জুথী, আর সাজিদ এক স্কুলে পড়াশোনা করতো। এই কলেজে এডমিশন নিয়েছে। ইরার পুরো নাম আরশি চৌধুরী ইরা। সে চেয়ারম্যান বাড়ির এক মাএ মেয়ে।তার বাবা এক জন চেয়ারম্যান। সে অনেক বছর দরে এই দলে যোক্ত আছেন।যথেষ্ট সম্মানিত এক জন মানুষ । যাকে এক নাম পুরো এলাকার মানুষ চিনলে ও ইরা কে তেমন ভালো ভাবে কেউ চেনে না।চেয়ারম্যান সাহেব কখনো তার মেয়ে জনতার সামনে দার করাননি। শএুতার ভয়ে।

কলেজ টাইমে ইরা জুথী সাজিদ বসে আসে কান্টিনে।আদিল এর করা নিদর্শন যে করেই হোক এই মেয়ে কে ১ঘন্টার ভেতরে তার সামনে দেখতে চাই। বডিগার্ড গুলো কান্টিনের সামনে গিয়ে ইরা কে খুব করে অনুরোধ করে বললো তাদের সাথে যেতে। কিন্তু ইরা কোনো ভাবেই তাদের সাথে যেতে রাজি নয়। সাজিদ এর বাড়ির বেশ কাছে থাকাই সে আদিলের বিষয়ে বেশ ভালো করে জানে। মন্ত্রীর ছেলের খুব একটা সুবিধার নয়।সাজিদ ইরা কে রিকোয়েস্ট করে তাদের সাথে যেতে নয়তো মন্তীর ছেলে তার কোনো বড় ক্ষতি করলে কেও তার দাই নিবে না। সাজিদ এর অনেক রিকোয়েস্টে ইরা যেতে বাধ্য হয়।

ইরা কলেজের বাইরে গেলে বডিগার্ড গুলো
তাকে ইশারা করে বলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বড় কালো গাড়িটার কাছে যেতে। ইরা যথেষ্ট সাহসি একটি মেয়ে তার চোখে মুখে ভয়ের কোনো ছাপ নেই। সে কালো গাড়ির ঠিক সামনে গিয়ে দাড়ায়। আদিল গাড়ির ভেতর বসে পা রেখে আছে বাইরে। আদিল কে উদ্দেশ্য করে ইরা বললো!!!
__কি হয়েছে!! সমস্যা কি আপনার আমাকে এখানে আসতে বলেছেন কেনো???
আদিল গাড়ি থেকে বের হয়ে ইরার চারপাশে একবার গুরে ভালো ভাবে দেখে নেই। ইরা শর্ট একটা টপস আর পান্ট পরেছে মাথায় কালো একটা হিজাব পরেছে। পুরো শরীর ডাকাই শুধু মুখ আর পা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। গায়ের রং দবদবে সাদা গোলাপি ঠোঁট টকটক করছে। এক দেখায় যে কোনে যুবক প্রেমে পরে যাবে। ইরা বেশ বিরক্ত হচ্ছে এই বিষয় গুলো দেখে।ইরা ঝাঁঝিয়ে উঠলো!

__হেই ইস্টুপিট এই ভাবে আমার চারপাশে গুরছেন কেনো।
আদিল বাঁকা হেসে ইরার ঠিক সামনে দাড়ালো!আর বললো!!!
__আই লাইক ইউ বেবি!!
ইরার ইচ্ছে হচ্ছে গাল বরবর আরও কয়েকটা থাপ্পড় দিতে। কিন্তু ইরা এই কাজটা আর করবে না। ইরা আর এই লোক কে স্পর্শ করে নিজের হাত টা নষ্ট করবে না। তাছাড়া একটা থাপ্পড় মারতে অনেক টা শক্তির প্রয়োজন। এই অসভ্য লোকটা কে থাপ্পড় মেরে তার শক্তির অপচর করতে চাই না। ইরা আদিল এর মতোন করে আদিল এর চার পাশে এক বার গুরে দেখে নিলো আদিল কে। আদিল দেখতে কম সুন্দর নয়। গায়ের রং বেশ ফর্সা। হাইট ছয় ফুটের কম হবে না।বলিষ্ঠভান শরীরের ঘঠন। দেখে মনে হয় সারা দিন জিম করতেই বসে থাকে। কালো সুট বুট পরেছে বিদেশি দের মতোন করে।দেখতে মন্দ লাগছে না।

__আদিল ভেবে ছিলো হয়তো ইরা ও তার মতোন করে বলবে আই লাইক ইট! কিন্তু ইরা না করে বরং প্রশ্ন ছুরে মারলো আদিল কে???
__হেই ইস্টুপিট আপনি যে বেয়াদব এটা গাড়ে ট্যাটু করে কেনো বোঝাতে হবে। আপনাকে দেখলে যে কেউ এমনি বুঝে যাবে। ইউ আর এ ছ্যাসচা ইডিয়েট।
ইরার এত সাহসিকতা দেখে আদিল বার বার প্রেমে পরে যাচ্ছে। যেখানে মানুষ সৌন্দর্যের প্রেমে পরে সেখানে কিনা আদিল সাহসিকতার প্রেমে পরে যাচ্ছে বার বার। মুগ্ধ হয়ে দেখছে ইরা কে।
__আদিল প্রশ্ন ছুড়ে মারলো ইরা কে??? নাম কি তোমার??
#আরশি_চৌধুরী_ইরা
__চৌধুরী বাড়ীর মেয়ে তুমি???
__হুম
ইন্টারেস্টিং!!! তোমার বাবার নাম কি???

__ইরা বেশ রেগে গেলো! আর বললো!!!
__আমি এখানে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে আসি নি।ইস্টুপিট!!!
ইরা রাগে কিরমির করতে করতে চলে যায় কলেজ ক্যাম্পাসের কান্টিনে যেখানে জুথী আর সাজিদ বসে আছে।
আদিল এর তো কথা শেষ হয় নি এখনো তার আগেই চলে গেলো ইরা। আদিলের কাছে তার বিশ্বস্ত বডিগার্ড এসে বললো।
__স্যার খুব আজেন্ট একটি কথা ছিলো??

আদিল হাত দিয়ে ইশারা করে বলতে বললো।আদিলের পূবের ন্যায় গাড়িতে গিয়ে বসলো।বডিগার্ড ইরা সম্পর্কে সব ডিটেইলস দিলো। আদিল আর এক মিনিট ও দেরি করলো না সোজা চলে গেলো সিকদার মহলে।
বড় দশ তলা ভবন পুরো টা জুড়ে রয়েছে এই বড় সিকদার বাড়ী।যেখানে সারিতে সারিতে গাড়ি থেকে শুরু করে রয়েছে বডিগার্ড। বাড়ীর প্রতিরক্ষার্থে বাড়ির চারপাশে বিশ্বস্ত বডিগার্ড গুলো গার্ড দিচ্ছে।যেখামে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আশরাফ সিকদার বতমানে বিপুল র্বোডে জয়ী হয়েছেন।সেখানে তার শএু অগনীত। আশরাফ সিকদার এর দুই ছেলে। আদনান সিকদার আদিল এবং আরিয়ান সিকদার আদিব।

#আদনান_সিকদার_আদিল বতমানে বাবার সাথে রাজনীতিতে জরিয়ে সামনে। সামনে বার ইলেকশনে দাড়াবে। আদিল ইউএস থেকে পড়াশোনা করে এসেছে। সে বতমানে কয়েকটা কোম্পানির মালিক। তবে তার বিজনেস নিয়ে তেমন ইন্টারেস্ট নেই। তার রক্তের শিরাই শিরাই জড়িয়ে আছে রাজনীতি। মো.আশরাফ সিকদার এর ছেলের পরিচয়ে সে রাজনীতি করবে না। সে নিজের যোগ্যতায় নিজেই অর্জন করে রাজনীতি করবে।মাঝে মাঝে না চাইতে ও বাবার সাথে যেতে হয় বিভিন্ন সমাবেশে। বাবার প্রতিরক্ষা করতে।
#আরিয়ান_সিকদার_আদিব এখন বতমানে দেশের বাইরে পড়াশোনা করছে।প্রায় শেষের দিকে পড়াশোনা। তবে আদিবের বিন্দু পরিমান ইন্টারেস্ট নেই রাজনীতি নিয়ে। সে সাইন্সে ইসটুডেন্ট তার ছোট বেলা থেকে স্বপ্ন বড় হয়ে ডক্টর হবে। দেশের নাম কামাবে।কোনো ঝামেলা ছাড়া জীবন কে উপভোগ করবে।

আদিল কলেজ থেকে সোজা বাড়িতে চলে এসেছে নিজের রুমে। নিজের বিশাল বড় রুমে বসে আছে গা এলিয়ে দিয়ে কলেজের গঠে যাওয়া বিষয় টা নিয়ে বার বার ভাবছে। শেষ পযর্ন্ত কিনা একটা থাপ্পড় খেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর ছেলে এক অবলা নারীর প্রেমে পরে গেলো। আদিল উঠে গিয়ে দাড়ালো আর হেটে চললো ড্রেসিং টেবিল এর বড় আয়নার সামনে। আদিল নিজের মুখের দিকে তাকাতেই দেখে গালে পাচ আঙুলে ছ্যাপ স্পষ্ট। আদিল সহ জুরে এক ঘুসি মারে আয়নায় সাথে সাথে আয়না কয়েক টুকরো হয়ে ভেঙে গুরিয়ে পরে নিচে। আদিলের হাত আয়নার টুকরো কাচের সাথে লেগে হাতের কয়েক জায়গায় কেটে গিয়ে রক্ত ছরছে। আদিলের চোখ রক্ত বরন লাল বর্ণ ধারণ করেছে। ছারবো না আমি ওই অবলা নারীকে আমাকে থাপ্পড় মারার শাস্তি তুমি ধীরে ধীরে পাবে। মাইন্ড ডিট।

ইরা বসে বসে আছে ক্যাম্পাসে সাথে আছে সাজিদ আর জুথী। ইরা সাহসীকতা তারা অনেক আগে দেখে আসছে। তবে আজকে যে ইরা ভুল জায়গায় দেখিয়ে ফেলেছে।হয়তো কিছু সময়ের মধ্যে ঠিক বুঝতে পারবে। সাজিদ মন্ত্রী দের সম্পর্কে প্যারসোনাল ভাবে খুব ভালো করে চিনে বিশেষ করে আদিল সিকদার কে। আদিল আজকে কলেজ ক্যাম্পাসের থাপ্পড় টা এত সহজেই হজম করে নিবে না। সে নিশ্চয়ই মনে মনে কোনো ছক কসছে। ইরা কে এই গুলো বলে ও কোনো লাভ নেই। হাসির ছলে উড়িয়ে দিবে।তাই সাজিদ কোনো রকম টেনশন না দিয়ে চুপ করে বসে আছে ইরা আর জুথীর পাশে।

ইরা কে নিতে চলে এসেছে তাদের বাড়ীর প্যারসোনাল গাড়ি তাই ইরা উঠে দারাই আর বলে আমি চলে যাচ্ছি তোরা ও চলে যা।ইরা গাড়িতে বসার সাথে সাথে ডাইবার গাড়ি স্টার দেয়।
চেয়ারম্যান বাড়ির এক মাএ মেয়ে ইরা৷ পড়াশোনার পাশাপাশি সে ভালো ছবি ও আঁকাতে পারে। তবে প্রেনটিং নিয়ে তার ক্যারিয়ার দাঁড় করাতে ইচ্ছুক নয়। সে চাই তার বাবার রাজনীতি নিয়ে সেও তার বাবার মতোন রাজনীতি করবে।

তার বয়স কম তবে পড়াশোনা শেষ করে অবশ্যই রাজনীতি ক্যারিয়ার টাই বেঁচে নিবে। তার বুদ্ধিমএা সাহসিকতা রাজনীতির প্রতি আগ্রহ বলে দিচ্ছে সে পারবে। ইরা কলেজ থেকে নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে চোখ বন্ধ করতেই তার সামনে ভেসে আসে সকালে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা। বিশেষ করে ওই ইসটুপিড গায়ের ট্যাটে টা বেশ অবাক করার মতোন।ট্যাটো দেখে মনে হয়। এই রকম ট্যাটো বাংলাদেশে করা সম্ভব নয়।হয়তো অন্য কোনে দেশ থেকে করিয়ে এনেছে। ট্যাটো তে টানা টানা করে লেখা !!!!

সিকদার মহলে আজ রাতে ছোট খাটো একটা ড্রিনার পার্টি এর আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে ছোট বড় থেকে শুরু করে রাজনীতি জগতের সবাই কে ইনবাইট করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ীতে মাঝে মাঝেই ড্রিনার পার্টির আয়োজন করা হয় ভিআইপি ভাবে। আশরাফ সিকদার এই ড্রিনার পার্টি তে নিজের ছেলে আদিল সিকদার কে ভালো ভাবে সবার সাথে ইনটুডিউস করাবেন। সামনের বছর জেনো ইলেকশনে দাড় করা হলে কারোর চিন্তে অসুবিধা না হয়।আরশাফ সিকদার নিজের ছেলেকে সবার সাথে খুব ভালো ভাবে পরিচয় করিয়ে দিলেন।

সবশেষে পরিচয় করিয়ে ছিলেন দ্যা গ্রেট মাফিয়া কিং ইয়ান রোশান এর সাথে। যার ক্ষমতা চার, পাচটা মন্ত্রীর তুলনায় হাজার গুন বেশি।যাকে সব এক নামে চিনে। তাকে সবাই জমের মতোন ভয় পাই। তার সৌন্দর্য মনোমুগ্ধকর বয়স সাতাশ এর কাছাকাছি।ক্যারলি চুল ফর্সা মুখ সুট বুট পরেছে একদম বিজনেস ম্যান দের মতোন লাগছে।তার সৌন্দর্যের পাশাপাশি আচার আচরন মানুষ কে বেশ ভাবনায় ফেলে দেয়।এই ছেলে কি সত্যি মাফিয়া। তবে এই বয়সে তার মাফিয়া হওয়ার রহস্য সবারি অজানা। আশরাফ সিকদার আদিল কে নিয়ে আসেন ইয়ান রোশানের এর সামনে। পাশে রাখা টেবিলে দুই জন সামনা সামনি হয়ে বসে হাত মিলালো। আশরাফ সিকদার পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন। আদিল সি ইস মাই স্যান!!!

ইরান হাতে হাত মিলাতে মিলাতে বললেন!! নাইস টু মিট ইউ মি.আদিল।
আদিল ভদ্রতার শহীদ হাত মেলালো ইয়ান রোশানের সাথে। দুজন এক টেবিলে বসে আছে । আদিল ড্রিংক করার অফার করলে ইয়ান রোশান সম্মতি জানায়।রাজনীতি এমন একটি মাদ্রম যেখানে টেনশন ছাড়া কোনো কিছুই নেই।নিজেদের টেনশন কমাতে ক্লান্তি দূর করতে বেশিরভাগ মানুষ লাল পানি সেবন করেন।অতিরিক্ত লাল পানি সেবনে কেউ নিজেদের কন্ট্রোলে নেই!!বেহুশ প্রায় অবস্থা এই রকম ড্রিনার পার্টিতে এই সব হওয়া টাই স্বাভাবিক। রাত গভীর থেকে গভীর ইয়াশ রোশানের এক জন বিশ্বস্ত বডিগার্ড এসে তাকে ডেকে তুলে কোনো সারা না পাওয়ায়। দুজন মিলে দরে গাড়িতে বসায় ইয়ান রোশান কে ! অতিরিক্ত লাল পানি সেবন করায় মাতাল প্রায় অবস্থা।

আদিল বেশ কিছুখন টেবিলেই বসে ছিলো বেহুশ হয়ে। আশরাফ সিকদার এখানে থাকলে হয়তো এত বেশি ড্রিংক করতে পারতো না আদিল।আশরাফ সিকদার হার্ট এর রোগী অতিরিক্ত টেনশন অতিরিক্ত মদ্যপান তার জন্য নিষিদ্ধ। আদিল রোশানের ঘন্টা খানেক পর একা একা নিজের রুমে চলে আসে। আজ অতিরিক্ত ড্রিংক করার ফলে মাথা ঘুরছে মাতাল মাতাল লাগছে। আদিল দপ করে বিছানায় গিয়ে সুয়ে পরলো।
সিকদার বাড়ীতে সকাল সকাল চেচামেচি তে ঘুম ভাঙলো সবার। আদিলের মা অহনা সিকদার বেশ চটে আছে সবার উপর বিশেষ করে আশরাফ সিকদার এর উপর। তার কি করে সাহস হলো এত রাত পযন্ত ছেলে কে বাইরে রেখে নিজে রুমে চলে এসেছেন।

__আরশাফ সিকদার এর ওয়াইফ মিসেস অহনা সিকদার এর কথাই বেশ বিরক্ত প্রকাশ করে বললেন!!
__তুমি শান্ত হও!!
অহনা সিকদার আরও বেশি চটে গেলো আশরাফ সিকদার এর উপর!! হাউ ডেয়ার ইউ!! তোমার সাহস হয় কিভাবে আমার ছেলে কে সারা রাত বাইরে রেখে আসার।
অহনা সিকদার দুই দিন আগে আমেরিকা গিয়ে ছিলেন তার বিজনেস এর কাজে।সে এক জন সফল বিজনেস ম্যান তার কোম্পানি সাথে আদিলের বেশ কয়েকটা কোম্পানি জড়িয়ে আছে। মিসেস অহনা সিকদার এর জোরা জুরিতে আদিল বাধ্য হয়ে বিজসেন জগতে প্রবেশ করে।কিন্তু আদিল প্রথম থেকেই বিজনেস এর থেকে বেশি রাজনীতিতে ফোকাস করে থাকে। এতে বেশ বিরক্ত হয় অহনা সিকদার। কিন্তু ছেলে কে বার বার বুঝাতে চাইলে সে বার বার অবাধ্য হয়। আশরাফ সিকদার এই রাজনীতি কে সারা জীবন ফোকাস করতে গিয়ে প্যারসোনাল লাইভে বেশ প্রভাব ফেলেছেন। তাই অহনা সিকদার চাই না তার মতোন জীবন জেনো তার ছেলের বউ এর না হয়।

অহনা সিকদার আর বেশি কিছু বললেন না ওনার হাসবেন্ড আশরাফ সিকদার কে! কারন আশরাফ সিকদার হার্ট এর রোগী। বেশি কিছু বললে অতিরিক্ত টেনশন করে নিজের শরীরের ক্ষতি করে ফেলবে।
এত খন যা কিছু গঠে গেলো তা শান্ত নয়নে তাকিয়ে দেখলো আশরাফ সিকদার এর ছোট ভাই আনিস সিকদার এবং তার ওয়াইফ মাইমুনা সিকদার।বড় ভাই-ভাবী এর কথা কাটাকাটি হয় মাঝে মাঝেই কিন্তু তারা দুই জনের এক জন ও পছন্দ করেন না। তাদের প্যারসোনাল লাইফ নিয়ে কেউ কথা বলুক। তাই বরাবরে মতোন তারা শুধু দেখলো কোনো কিছু না বলে।আনিস সিকদারের এক মাএ মেয়ে কলি সিকদার। সে এখন কলেজে পড়াশোনা করছে।

চেয়ারম্যান বাড়িতে ইরার বাবা আজাদ চৌধুরী বসে আছেন টিভির সামনে সোফায়। সকাল সকাল টিভি দেখছেন। বিশেষ করে সকাল আট টার খবর সে এক দম মিস করেন না৷ অন্যদিকে ইরার মা সালমা চৌধুরী সকালের রান্না শেষ করে তার একমাত্র ছোট মেয়ে ইরা কে ডেকে তুললেন। সকাল আটটা বাজে দশটাই থেকে ক্লাস শুরু।ইরার রুমের দরজা কখনো লাগাই না রাতে অনেক বেশি পড়াশোনা করার জন্য সুয়ে পরতে বেশ লেট হয়।সকাল সকাল সালমা চৌধুরী তাকে তুলে না দিলে ইরা এক দিন ও ঠিক মতোন কলেজে যেতে পারবে না। সালমা চৌধুরী ইরা কে তুলে দিয়ে পাঠালেন ওয়াশরুমে আর বললেন ফ্রেশ হয়ে খাওয়ার টেবিলে আসতে।
সালমা চৌধুরী খাবার রেডি করছেন টেবিলে। তাদের ছোট পরিবার ইরার মা বাবা আর ইরা তিনজন। ইরা একদম ফ্রেশ হয়ে কলেজ ড্রেস পরে চলে এসেছে খাওয়ার টেবিলে। ইরা কে প্রতিদিন সালমা চৌধুরী নিজের হাতে খাবার খাইয়ে দেয়। আজকেও তার ব্যাতিক্রম নয়।ইরার খাবার খাওয়ার মাঝে প্রশ্ন করলেন আজাদ চৌধুরী।

__ইরা মামনি তোমার কলেজ কোনো সমস্যা হয় নাকি!!!!
ইরার কলেজের কথা মনে পরতেই সেই ট্যাটু করা ইস্টুপিট টার কথা মনে পরে যায়৷ মনে পরতেই সে বেশ বিরক্ত হয়ে যায়। আর মনে মনে বলে আজকে কোনো ভাবেই যেনো ওই ইডিয়েট টার সাথে দেখা না হয়।
__ইরার পাশে থাকা সালমা চৌধুরী ইরা কে ডেকে বললো কি ভাবসিস ইরা!! সব ঠিক আছে???
___ইরা আমতা আমতা করে বললো!!হ্যা… আম…আম্মু সব ঠিক আছে।

আজাদ চৌধুরী ইরা কে উদ্দেশ্য করে বললেন! তুমি গাড়িতে গিয়ে বসো আমি রেডি হয়ে আসছি!!!সালমা চৌধুরী কোথায় যাবে জিজ্ঞেস করলে আজাদ চৌধুরী জানায় মন্ত্যালয়ে যাবে।কিছু কাজ আছে সেখানে।
ইরা সম্মতি জানিয়ে বলে ঠিক আছে আব্বু তুমি আসো আমি গাড়িতে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি। সালমা চৌধুরী কে বাই আম্মু বলে গাড়িতে গিয়ে বসলো ইরা। কয়েক মিনিট পর চলে আসলেন আজাদ চৌধুরী। প্রথমে ইরা কে কলেজে নামিয়ে দিয়ে তার পর তিনি চলে যাবেন নিজের প্রয়োজনীয় কাজে। ইরা দের শহরের নাম চন্দ্রপুর। সেখান থেকে গাড়িতে আসতে পনেরো মিনিট সময় লাগে।কলেজের বেশ কাছে। ইরা কে কলেজের গেটের সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে যায় আজাদ চৌধুরী।

ইরা গেট থেকে নেমে সোজা চলে যায় কলেজ ক্যাম্পাসে। কান্টিনে বসে আছে জুথী অপেক্ষা করছে ইরার জন্য।সাজিদ এখনো আসে নি। সাজিদ একটা টেওশনি করাই। যার কারনে মাঝে মাঝেই কলেজে আসতে দেরি হয়।
জুথী ইরা কে জিজ্ঞেস করলো! কালকের বিষয়টা নিয়ে তার সাথে আর দেখা হয়েছে কিনা ওই ছেলের। ইরা জানাই তার সাথে আর দেখা হয়নি। আর সে ইচ্ছুক নয়। ওই ইসটুপিড টার সাথে দেখা করতে। তখনি কলেজে প্রবেশ করলো সাজিদ।

__হাই টু লেডি ক্যাসে হো তুম লোগ???
সাজিদ মাঝে মাঝেই হিন্দিতে কথা বলে। তার ভালো লাগে হিন্দিতে কথা বলতে। এই নিয়ে কয়েক বার বান্ধবী দের কটাখের স্বীকার হয়েছে সাজিদ।সাজিদ যথেষ্ট মধ্যবিও পরিবারের ছেলে। তার বাবা নেই অনেক আগেই এক্সিডেন্ট মারা গেছেন। থাকার মধ্যে শুধু এক মাএ মা। সংসারের চাপ সব টাই সাজিদ এর উপর নির্ভর করে। সবাই বেশ কিছু খন আলাপ করে চলে যায় ক্লাস রুমে।
আদিল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বসে আছে। মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। নিচে থেকে এক কাপ কফি নিয়ে এসেছে কলি। দরজায় নক করে জিজ্ঞেস করলো!!!

__ভাইয়া ভেতরে আসবো!!!
__কলির ডাক শুনে আদিল দরজার দিকে তাকিয়ে সম্মতি দিয়ে বললো ভেতরে আসতে। কলির হাতে থাকা কফির কাপ টা আদিল কে দিয়ে বললো! বড় আম্মু সকালে আমেরিকা থেকে ব্যাক করছে।অনেক রেগে আছে তোমার উপর ভাইয়া।
কেনো রেগে আছে জানতে চাইলে কলি ঠিক মতোন সব টা গুছিয়ে বলতে পারে না। কারন কলি তখন সেখানে ছিলো না। আদিল কলি কে বলে তুই রুমে যা আমি দেখছি। কলি সম্মতি জানিয়ে চলে যায় নিজের রুমে।আদিল সময় নিয়ে কফিটা খেতে খেতে কল করে আদিলের বেষ্ট বেন্ড ইশান কে।গত দুই দিন তাদের ব্যাস্ততার জন্য তেমন কথা হয় নি শুধু হাই হ্যালো ছাড়া। আদিল ইশান কে বিকেলের দিকে তাদের বাড়িতে আসতে বলে ফোন কেটে দেয়।

আদিল হাটতে হাটতে চলে যায় অহনা সিকদার এর রুমে। অহনা সিকদার ফ্রেশ হয়ে কম্পিউটার নিয়ে বসেছে অনেক ইমপোর্টার্স কাজ আছে আপাতত সেগুলোই করছে। অহনা সিকদার যথেষ্ট সেনসেটিভ একজন মানুষ। কাজে ফাঁকি দেয়া তার একদম পছন্দ নয়। আদিল হেলে দুলে চলে আসে অহনা সিকদার এর রুমে। অহনা সিকদার আদিলে এর দিকে তাকিয়ে ফের মনোযোগ দেয় কম্পিউটারে।কম্পিউটারে কাজ করতে থাকে আর আদিল কে জিজ্ঞেস করে এখন গুর কাটে নি তোমার???

__আদিল কিছুটা আমতা আমতা করে বলে!!ম….মম কি বলছো তুমি এসব।
অহনা সিকদার কম্পিউটার বন্ধ করে আদিলের কাছে গিয়ে পাশে বসে। আর ভালো বাসা শহীদ বলে ফোকাস করো বিজনেসে রাজনীতিতে নয়। তোমার পুরো ক্যারিয়ার নষ্ট করে দিবে এই রাজনীতি । ট্রাস মি মাই ছান। আদিল অহনা সিকদার এর প্রশ্নের কোনো উওর না করে বরং জিজ্ঞেস করে আদিল কখন এলে মম!
অহনা সিকদার জানে সে আদিল কে হাজার বার বুঝালেও সে বুঝবে না। তাদের বাপ ছেলের রক্তের শিরাই শিরাই জড়িয়ে আছে রাজনীতি। সামনের বছর ইলেকশন যদি কোনো ভাবে আদিল কে আটকানো যায়। মনে মনে ছক কসতে থাকেন অহনা সিকদার। যে করেই হোক আদিল কে রাজনীতি থেকে দূরে সরাতেই হবে।

আদিল মায়ের মনের কথা চট করে বুঝে ফেলে অহনা সিকদার কে বলেন!!! যা নিয়ে চিন্তা করছো মম! ওই টাই কাজ হবে না নেক্সট অফসন খুঁজে বের করো। আদিল কথা শেষ করে দীড় পায়ে রুমে থেকে চলে আসে।
কলেজে ক্যাম্পাসে বসে গল্প করেছে জুথী ইরা সাজিদ। জুথী আর ইরার এক দম ছোট থেকেই বন্ধুত্ব। তাদের সম্পর্ক দিন দিন আরও গভীর থেকে গভীর হচ্ছে।আজকে আকাশের অবস্থা তেমন ভালো না হওয়াই স্যার বলেছেন কিছুখনের মধ্যে ছুটি দিয়ে দিবে।তাই জুথী ইরা সাজিদ সবাই ক্লাস রুমে চলে গিয়ে নিজে দের ব্যাগ গুছাতে। ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে গেছে ক্লাস রুম থেকে এক এক করে সবাই। ইরার গাড়িটা এসে পৌঁছাতে পারে নি এখনো। কারন আজকে বেশি আগে ছুটি দিয়ে দিয়েছে। আরও বেশ কিছু খন পর ছুটি দিতো প্রায় দুই টাই। আকাশের অবস্থা তেমন ভালো না হওয়ার ছুটি দিয়ে দিয়েছে। তিন জন হাটতে শুরু করলো! কিছু খনের মধ্যে অনেক বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়।

সাজিদ এর বাসা আরেক দিকে হওয়ায় সাজিদ সবাই কে বাই বলে চলে যায়। সাথে ইরা আর জুথী। কিছু খন পর জুথী ও আলাদা হয়ে যায়।পরে থাকে শুধু ইরা রাস্তায় অনেক বৃষ্টি হওয়ার কারনে তেমন গাড়ি চলাচল করছে না। বলা যায় আশে পাশে তেমন কোনো রিকশাও নেই। মনে হচ্ছে ঝড়ের গতি ও বাড়ছে। নিলি বিলি রাস্তা শুন সান। বুকের ভেতর টা কেমন যেনো দরপর করছে। ঠান্ডায় পুরো শরীর জমে যাচ্ছে। কিছু দূর যাওয়ার পর যেনো সামনে একটা কুড়ে ঘর দেখে স্বস্তি পেলো ইরা।। তারাতাড়ি করে ছুটে গেলো সেই ঘড়ের দিকে। কুড়ে ঘরের সামনে যেতেই দেখে অনেক গুলো পুরুষ দাড়িয়ে আছে। যেনো দেখে মনে হচ্ছে এই কুড়ে ঘড়টা সবার জন্য আশ্রয় স্থল। এত গুলো লোক দেখে ইরা বেশ ভরকে গেলো কুড়ে ঘরে প্রবেশ না করে হাটা ধরলো বাড়ীর উদ্দেশ্য। কিছু দূর সামনে যেতে চোখে পরলো একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ইরা ঠান্ডায় পুরো শরীর জমে যাচ্ছে। তাই সে সামনে দাড়িয়ে থাকা কালো রংঙের গাড়িটার সামনে গিয়ে কিছুটা ভয় আর লজ্জা নিয়ে নক করলো কালো গাড়িতে!!!

ইরা খুব আকুতি মিনতি করে বললো গাড়িতে থাকা লোকটি কে । লোকটি কে ইরা আগে কখনো দেখে নি। কিছু সময় নিয়ে তাকিয়ে দেখছে একে অপরকে। ইরার শরীরে কলেজ ড্রেস পড়া।ড্রেস টা সাদা হওয়ায় বৃষ্টির কারনে শরীরের কিছু জায়গা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। এতে বেশ বিরক্ত হচ্ছে ইরা।

কালো গাড়িতে থাকা লোকটা ইরা কে গাড়ির ভেতরে আসতে অনুরোধ করে।ইরা সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে বসলো গাড়ির ভেতরে। অতিরিক্ত বৃষ্টিতে বেজার কারনে ঠান্ডা হেসকি তুলছে বার বার। পাশের সিটে বসে থাকা লোকটা ইরা কে টিস্যু বক্স এগিয়ে দেয়।ইরা টিস্যু বক্স টা হাতে নিয়ে শরীরের কিছুটা পানি মুছে নিলো। গাড়িতে থাকা লোকটা অভাক হয়ে তাকিয়ে আছে ইরার দিকে। সে এতটা সুন্দর নারীকে আগে কখনো দেখে নি। ফর্সা মুখ টা বৃষ্টি তে ভেজার ফলে আরও সৌন্দর্য হাজার গুন বেড়ে গেছে। গোলাপি ঠোঁট টা আরও টকটক করছে মাথায় হিজাব থাকার কারনে চুল গুলো স্পর্শ নয়। তবে যেকোনো পুরুষ এক দেখায় এই মেয়ের প্রেমে পরে যেতে বাদ্য।বয়স কেবল আঠারো কোমল কেশরী। গাড়িতে থাকা লোকটা বার বার ইরা কে দেখছে এতে বেশ হয়ে যাচ্ছে ইরা। গাড়ীতে থাকা লোকটা ইরা কে নাম জিজ্ঞেস করলে ইরা বলে। তার নাম আরশি চৌধুরী ইরা।

গাড়িতে থাকা লোক টার বার বার মনে হচ্ছে এই মেয়ের পরিবার কে সে হয়তো আগে থেকে চেনে।তাই আবার ও প্রশ্ন করে আপনি কি চেয়ারম্যান আজাদ চৌধুরীর মেয়ে।ইরা বেশ কৌতুহল হয়। তাকে তো বিশেষ করে কেউ চিনে না তাহলে এই ছেলে কি করে বুঝলো আমি চেয়ারম্যান এর মেয়ে।ইরা সম্মতি জানিয়ে বললো হ্যা আমি চেয়ারম্যান এর মেয়ে তবে আপনি আমার বাবা কে কিভাবে চেনেন।এই বার গাড়িতে থাকা লোকটার মনে হলো যে এই মেয়ের বয়স সত্যিই কম তা না হলে এই প্রশ্ন কিভাবে করে বোকার মতোন। তার বাবা চেয়ারম্যান দশ গ্রামের দশ জন মানুষ চিনবে জানবে এটাই স্বাভাবিক। ইরা উল্টো প্রশ্ন করলো আপনাকে তো আমি চিনি না আপনার নাম কি!!

__ছেলেটা মিষ্টি করে হাসি দিয়ে বললো! থাক না কিছু অজানা পরিচয় ।
ইরা আর জিজ্ঞেস করলো না বাইরে চোখ পরতেই দেখে সে বাড়ীর সামনে চলে এসেছে। ইরা তো এই লোকটা কে বাড়ীর ঠিকানা টাও দেয় নি! তাহলে কি করে বাড়ি চিনলো। ইরা আর প্রশ্ন না করে গাড়ি থেকে নেমে গেলো আর ভাবলো থাক না অচেনা কি হবে এত জানা শোনা হয়ে। ইরা বাড়ির ভেতরে যাওয়ার আগে আবার ও তাকালো সেই গাড়ির দিকে সেই গাড়িটা এখনো দাড়িয়ে আছে। ইরা কে দেখছে গাড়িতে থাকা লোকটা হাত দিয়ে ইশারা করে বাই বললো।তারপর গাড়ির গ্লাস উপরে তুলে চলে গেলো লোকটা। ইরা ও বাড়ির ভেতরে চলে যায়।ইরা মা সালমা চৌধুরী তারাতারি করে আসেন মেয়ের কাছে। এখনো ইরার বাবা আসেন নি। তাই হয়তো গাড়ি টাও পাঠানো হয় নি কলেজে।ইরা কে তারাতারি করে সাওয়ারে পাঠিয়ে তিনি গরম পানি করে আনলেন। অতিরিক্ত বৃষ্টি তে বেজার কারনে চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।

গাড়িতে থাকা লোকটা সেই মুহূর্তে কল করলো তার বাবা ইখলাস খান কে । ইরা কে বেশ পছন্দ হয়েছে তার। তাই চেয়ারম্যান বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর জন্য বললো । কলের অপর প্রান্তে থাকা ইখলাস খান জানাই ঠিক আছে। প্লিজ ক্যাম ব্যাক টু হোম। আই ওয়েটিং ফর ইউ।
আদিল কে সঙ্গে নিয়ে আশরাফ সিকদার গিয়েছেন জন সমাবেশে। সামনের ইলেকশনে যে ভাবেই হোক আদিল কে দেখতে চাই। আদিল আর আশরাফ সিকদার বসে আছেন একটি গাড়িতে। আশরাফ সিকদার এর শএুর অভাব নেই।সামনে পেছনে গাড়ি আসছে সারি সারি করে আসছে বডিগার্ড রা। কোনো সমস্যা জেনো না নয়। করা নজরে রাখতে হয় আশরাফ সিকদার কে।আশরাফ সিকদার কোথাও গেলে আদিল ও সাথে যায়।যে ভাবেই হোক বাবা কে পোট্রেক্ট করতে হবে বলে।

অহনা সিকদার মিটিং কাজে সব সময় এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াত করে থাকেন। তার এখন মনে হচ্ছে আদিল কে ভালো একটা পরিবারের মেয়ের সাথে বিয়ে করিয়ে দিতে । অহনা সিকদার এর একমাএ বান্ধবী সোনালী তালুকদার।তারা সহ পরিবারে ইউএসএ থাকেন। সোনালী তালুকদার এর মাএ মেয়ে আইরা তালুকদার। আইরা দেখতে ঠিক বিদেশি দের মতোন দেখতে।ফর্সা গায়ের রং সর্ট হেয়ার ইস্টাইস্টিস যথেষ্ট স্মার্ট সুন্দর। মডার্ন মেয়ে দের মতোন তার চলা ফেরা। যথেষ্ট শিক্ষীত বুদ্ধিমতি। সোনালী তালুকদার অনেক আগে থেকেই অহনা সিকদার এর কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়ে ছিলেন। অহনা সিকদার এখন মনে হচ্ছে এই বার এই বিষয় টা নিয়ে ভাবা উঠিত। আগামী দুই দিনের মধ্যে সোনালী তালুকদার কে বলা হবে তার মেয়ে মিস আইরা কে নিয়ে যেনো হৃদয়পুরের সিকদার বাড়িতে আসে। অতিদ্রুত এনগেজমেন্ট এর ব্যাবস্থা করতে চান অহনা সিকদার। যে ভাবেই হোক রাজনীতি থেকে আদিল কে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে।

বিকেল গড়িতে রাত ইরা বৃষ্টিতে ভেজার ফলে সারা শরীরে জ্বরের তাপমাত্রা বেশ অনেক খানি বেড়েছে। আজাদ চৌধুরী প্রথমে বাড়িতে প্রবেশ করেই দেখেন ইরার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। তাই তাকে নিয়ে বাড়ীর পাশে থাকা ডক্টর কে দেখিয়ে মেডিসিন খাওয়ে ছিলো। কিন্তু অতিরিক্ত ঠান্ডা কারনে জ্বর বাধিয়ে ফেলেছে। আজাদ চৌধুরীর যথেষ্ট ভরসা ছিলো মেয়ের উপর। সে কখনো ছেলে মানুষি করবে না। কিন্তু আজ একটু গাড়ি পাঠাতে লেট হয়েছে বিদায় একা একা বৃষ্টিতে ভিজে বাড়িতে চলে এসেছে। সালমা চৌধুরী মেয়ের মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছেন। আজকে রাতে সালমা চৌধুরী মেয়ের কাছেই থাকবে ইরা বুঝতে মেরে। সালমা চৌধুরী কে বার বার নিষেধ করলো।

__আম্মু তুমি সুয়ে পরো আমি ঠিক হয়ে যাবো সকালে। ইরা বেশ জুর করেই পাঠিয়ে দিলো সালমা চৌধুরী কে যদি সালমা চৌধুরী ইরার সাথে এই রুমে থাকে তাহলে সারা রাত দুই চোখের পাতা এক করবেন না। সারা রাত জেগে বসে থাকবে মেয়ের পাশে।
ইশান বিকেলে বেশ ব্যাস্ততার জন্য বিকেলে আদিলের সাথে দেখা করতে পারে নি। তবে রাতে চলে এসেছে আদিল দের বাসায়।বাড়িতে যাওয়ার সাঙ্গে সঙ্গে দেখা আশরাফ সিকদার এর সাথে। আশরাফ সিকদার ঈশান কে জিজ্ঞেস করলো!!

__তোমাকে আজ কাল বেশি দেখায় যাই কোথাই থাকো তুমি??
__আসলে আংঙ্গেল আব্বুর শরীরের কন্ডিশন আগের থেকে অনেক টাই গুরুতর। আজকাল কোম্পানির পাশাপাশি হসপিটালে ও বেশ দৌড়াদৌড়ি করতে হয়।
আশরাফ সিকদার ঈশান কে জিজ্ঞেস করলেন!
বাবা তুমি তো কম্পিউটার ইন্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা করছো। তাতে সমস্যা হয় না কোম্পানি সামলাতে।
ঈশান কিছুটা নরম কন্ঠে জানায়!

সমস্যা হয় তো বেশ! তবে কি করার আমি ছাড়া তো আর কেউ নেই সামলাোর জন্য।তাছাড়া আব্বুর বিশ্বস্ত পি.এ আছে আমাকে যথেষ্ট সাহায্য করেন৷
আরশাফ সিকদার ঈশান এই মাথায় হাত রেখে বললেন চিন্তা করো ঠিক হয়ে যাবে তোমার বাবা। কথা শেষ করে ঈশান উপরে যেতে চাইলে আশরাফ সিকদার ঈশান কে জিজ্ঞেস করলেন বিয়ে করবে কবে তোমরা।আমরা কি নাতি নাতনির মুখ দেখবো না নাকি???
আশরাফ সিকদার যথেষ্ট মিশুক মানুষ সবাই সাথে খুব তারাতাড়ি মিশে যায়। ঈশান আশরাফ সিকদার কে জানায় মেয়েই তো খুজে পাচ্ছি না আংকেল। আপনার একটা মেয়ে থাকলে আমার জন্য বেশ সুবিধা হতো। আপনাকে অতিরিক্ত সুসংবাদ দিতাম!!ঈশান কথা শেষ করে হাসতে হাসতে চলে গেলো আদিলের রুমে।
ঈশান এর এমন অদ্ভুত হাসি দেখে আদিল রাগে কটমট করতে করতে বললো!!!

___পাবনা ওই দিকে সোজা গিয়ে বামে!!!
ঈশান এর হাসি কমা দূরের কথা আরও বেড়ে গিয়ে আদিল কে বললো !!
__চল দুইজনে এক সাথে যাই রাস্তা চিনতে সুবিধা হবে!!
অহনা সিকদার বেশ কিছু পর আদিলের রুমে আসলেন৷সোনালি তালুকদার এর মেয়ে আইরা তালুকদার এর বিয়ের বিষয়ে কথা বলতে। ঘরে প্রবেশ করে দেখেন ঈশান বিছানায় ভিমরি খেয়ে সুয়ে আছে সাথে আদিল ও। অহনা সিকদার আদিলের দিকে প্রশ্ন ছুরে বললেন!!
__আমি তোমার এনগেজমেন্টের ডেট ঠিক করেছি আদিল!
আদিল অহনা সিকদার এর কথাই বেশ হবাক হলেন??
__মানে!! কি বলছো মম???

__অহনা সিকদার নিজের চোয়াল শক্ত করে বললেন!! মাই ডিসিশন ইস ফাইনাল ডিসিশন !! কোনো এক্সকিউজ শুনতে রাজি নয় আমি!!!এনগেজমেন্ট এর জন্য পিপারেশন নাও আদিল!! রাইট নাও???
অহনা সিকদার নিজের মতামত জানিয়ে চলে গেলেন রুম থেকে। তার সিদ্ধান্ত মানেই মানতে সবাই বাধ্য। আদিল তো জানেই না মেয়ে টাকে। অহনা সিকদার কে কার সাথে এনগেজমেন্ট তা জিজ্ঞেস না করে উল্টো রাগিয়ে দিলো এখন সে জানবে কিভাবে মেয়ে টা কে!!! আদিল এর মতোন কনফিউজে আছে ঈশানের ও।আদিল দ্রুত গতিতে কল করে তার ড্যাড আশরাফ সিকদার কে। কল পাওয়ার সাথে সাথে আশরাফ সিকদার চলে আসেন আদিলের রুমে।
আশরাফ সিকদার কিছু খুশি খুশি মনে প্রশ্ন করেন ছেলেকে!!!

হাই জেন্টাল ম্যানরা লাল পানি খাওয়ানোর জন্য কি গুরুতর কল করেছো।
__আদিল রাগে চোখ মুখ কটমট করতে করতে বললো!! তোমার বউ আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবে না ড্যাড।
আশরাফ সিকদার মনে মনে বললো!
__আমাকেই শান্তিতে থাকতে দেই না আর! টুম তো ছোটা বাচ্চা। আশরাফ সিকদার আদিলে কে জিজ্ঞেস করলেন! কি করেছে আমার বউ তোমার সাথে!! সব সময় আমার বউয়ের দুষ দিবা না আমার মন খারাপ হয় বুঝছো!!!
আদিল বেশ রেগে গিয়ে বললো!!!
তোমার বউকে তুমি সামলাতে পারো না!!! আমার বিয়ে নিয়ে টানাটানি করছে কেনো??? এত দিন ছিলো রাজনীতি নিয়ে আর এখন পরেছে আমার বিয়ে নিয়ে।।

__আরশাফ সিকদার নিজের মুখ টাকে গোমরা করে বললেন!!!বউ কে সামলাতে বেশ কষ্ট হয় আমার।আজকে পরেছে তোমার বিয়ে নিয়ে কালকে পরবে আমার বিয়ে নিয়ে।সবি কপাল!!!
ঈশান বাপ ছেলের এমন কথা শুনে ব্যাবা চ্যাকা খেয়ে বসে আছে। এদের দেখলে কে বলবে এরা বাপ ছেলে।দেখে মনে হয় বন্ধ।ঈশান মুখ টাকে গোমরা করে বেশ অভিমানি হয়ে বললো!!!

আংঙ্গেল আপনার একটা মেয়ে থাকলে আমার জন্য সুবিধা হতো আশেপাশে আর খুজতে হতো না!ফ্যামিলি প্লানিং কি এখনো করছেন নাকি শেষ করে ফেলেছেন।
আশরাফ সিকদার বিছানা থেকে উঠতে উঠতে ঈশান কে উদ্দেশ্য করে বললেন!! ফ্যামিলি প্লানিং শেষ করে ছিলাম। ছেলের যা অবস্থা মনে হচ্ছে আমার আবার শুরু করতে হবে।
ইশান বিছানা থেকে সোজা উঠে বসলো আর বললো!! আংঙ্গেল তাহলে আমার ওডার টা নিয়ে যান!!
__আদিল বেশ অবাক হয়ে বললো!!!
__ মানে???

ঈশান ঠোঁট আঙুল দিয়ে ইশারা করে চুপ করতে বলে আর বলে বড় দের মাঝে ছোট দের কথা বলতে নেই।
এখন বুঝতে পারছি আংঙ্গেল কেনো আবার এই বয়সে ফ্যামিলি প্লানিং করতে চাইছেন???
আশরাফ সিকদার ঈশান এর কথাই সম্মতি জানিয়ে বললেন!! আহারে আমার নিজের জন্য!কেউ একজন এত দিনে আমার মনে কথা বুঝলো!!! আশরাফ সিকদার উওর করতে করতে চলে গেলেন নিজের রুমে। কিন্তু আদিল যায় জন্য আসতে বলে ছিলো তার বাবা কে লাস্ট পযন্ত কি না সেটাই শুনতে পারলো না।



 

Post a Comment

0 Comments